১৫ই আগস্টে কোনো কবিতা লেখা হয়নি!
সেদিন কোনো কবিতা লেখা হয়নি!
যখন বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশ পড়েছিল
বত্রিশ নম্বরের সিঁড়িতে।
সেদিন কবিরা ছিলেন মূক—বধির
সেদিন কবিরা মৃত্যুভয়ে ঠক—ঠক করে
কাঁপছিলেন!
কোটি মানুষের নেতা মুখথুবড়ে পড়ে
রইলেন
আর আমরা কবিরা প্রেমের কবিতা লিখে
গেলাম প্রেয়সির সরস জায়নামাজে!
কী অদ্ভুত দেশপ্রেম আমাদের!
কবিতা কি শুধু প্রেমের? কবিতা কি প্রতিবাদের নয়?
কবি কেন রক্তচক্ষুকে ভয় করে?
কেন প্রতিবাদী হতে পারে না কবিতা?
সেদিন কি অভিধানের পাতা শূন্য হয়েছিল?
শব্দগুলো হেঁটে—হেঁটে বত্রিশ নম্বরে
জড়ো হয়েছিল
কাকদের সঙ্গে?
কতগুলো কাক, কতগুলো শালিক এবং দোয়েল
সেদিন বত্রিশ নম্বরের নারকেল গাছের
পাতায়
স্তব্ধ হয়ে বসেছিল জনকের রক্তাক্ত লাশ
দেখে।
সেদিন বাতাস ছিল খুব অচঞ্চল
ফুলে ফুলে ভ্রমর ছিল না, ছিল না মধুকর
ধানমন্ডির লেকের পানি ফুঁসে উঠেছিল
কেউ তা লক্ষ করেনি!
পদ্মা মেঘনা সেদিন সর্বগ্রাসী হয়েছিল,
দুকূল ভেঙ্গেছিল ক্রোধে;
অথচ হৃদয় ভাঙার গান কেউ গায়নি সেদিন!
তখন কিশোরবেলা আমার, কতটুকই—বা বুঝি!
‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’ এক
জালিমের কণ্ঠ
শুনে আঁতকে উঠেছিলাম, এইটুকু বুঝেছিলামÑ
আমাদের অস্তিত্ব ধরে টান দিয়েছে ওরা,
আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে আবার।
সেদিন কেউ লেখেনি একটি গীতিকবিতাও,
কোনো সুরকার সুরের ইন্দ্রজালে ইতিহাস
লিখতে পারেননি।
কী নিদারুণ ব্যর্থতা আমাদের!
কী অকৃতজ্ঞতা!
জনক ছাড়া জননীর এই বাংলায় আবার
উল্লাসের মেতে উঠছে ঘাতক,
আবার ষড়যন্ত্র, আবার ঘাতকের বুলেট খেঁাজে
দেশপ্রেমিকের বুক, আবার পতাকার রং
সবুজ—সাদার স্বপ্ন দেখে পরাজিত শকুন।
বঙ্গবন্ধু এখন শান্ত সমাহিত
টুঙ্গিপাড়ায়
আমরা দলে—দলে পিতার সমাধিতে যাই,
পেঁৗছার আগেই ক্যামেরা লুকথ্রু ঠিক করে
রাখি,
পরিপাটি পোশাকে হাজার ছবির কবিতা লিখি
সোশ্যাল মিডিয়া, পত্রপত্রিকায় সেসব উগরে দিই;
বঙ্গবন্ধু সেসব দেখে হাসেন আর আক্ষেপ
করে বলেনÑ
বাঙালি চিরদিন বাঙালিই রয়ে গেল,
মানুষ হতে পারল না আজও!
সতিই তো! ‘সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ
জননী