ক্ষমা করুন কমরেড
আমাকে ক্ষমা করুন কমরেড,
এখন আমি আর সমাজতন্ত্রের কথা ভাবি না।
অন্ন চাই, বস্ত্র চাই কিংবা দুনিয়ার মজদুর সব এক
হও বলে
দুই হাতে শাবল তুলে ধরি না এখন আর;
এখন ইশতাহারে কী—কী লেখা হবে—
সে জন্যে রাত ভোর করি না আমি।
অর্ধশতাব্দীর এই দীর্ঘ সময়ে নিরন্ন
শীতার্ত মজুরের জন্যে
একটি কম্বলও সংগ্রহ করা হয়নি আমার!
বুভুক্ষু কৃষকের জন্যেও একমুঠো চালের
সংস্থান করতে পারিনি;
যে শ্রমিক গাঁইতি চালাতে—চালাতে
চৈত্রের তাপদাহে মূর্ছা যায়,
তার জন্যে তালপাতার একটি পাখাও তৈরি
হয়নি
আমার দাবির মুখে। ছিঃ কী লজ্জা আমার!
আমার মুখে কি সমাজতন্ত্র শোভা পায়?
কোন মুখে ওসব বেদবাক্য উচ্চারণ করি
বলুন!
আমাকে ক্ষমা করুন কমরেড,
আমি আর রাজপথে মিছিলে যাব না কোনোদিন,
আমি আর প্লাকার্ড—ফেস্টুন নিয়ে কোনো
দাবির কথা
জানাব না কখনো আর।
জরিনা, সখিনাদের জন্যে, শীতের রাতে উলঙ্গ শিশুটির জন্যে
পুঁজিপতিদের কাছে দুই হাত পেতে ভিক্ষা
নিতেও
এখন দ্বিধা নেই আমার।
আমি ওদের চাকুরে ছাপোষা কেরানি
আমার মুখে সমাজতন্ত্র মানায় না
একেবারেই!
কমলাপুরের রেলবস্তির কিশোরী আমেনার কথা
মনে পড়ে কমরেড? কিংবা সখিনার কথা?
শহরের এই ঝলমল জীবনে ওদেরকে আর কে মনে
রাখে বলুন!
ওরা এখনও পেট বাঁচাতে ভাতের জন্যে
ইজ্জত বেঁচে!
হায় এই না হলে অর্ধশতাব্দীর
স্বাধীনতা!
এই না হলে রক্তে রক্তিম স্বপ্ন!
আমি এখন আর স্বপ্ন দেখি না নতুন কোনো
ভোরের,
অন্ধকারকেই আমার নিয়তি ভেবে—ভেবে আমার
সব দাবি
নির্বাসন দিয়ে নিঃস্ব আমি এখন
পুঁজিপতিদের গোলাম!
আমাকে ক্ষমা করুন কমরেড—