বিদ্রোহী কবিতা ও কাজী নজরুল
কাজীদার গল্প [৪] ।। ১৯২১ সাল। ডিসেম্বর মাসের শীতের গভীর রাত। কলকাতা শহর তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জেগে আছেন একা কাজী নজরুল, তার হাতে একটি পেন্সিল ও টেবিলের ওপর কিছু কাগজ। ঝাঁকড়া চুলের বাবরী দোলানো অমিত তেজি নজরুল কাগজের উপর খস-খস করে লিখে চলেছিলেন কিছু। তার চোখ থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছিল। শীতের মধ্যে ঘামছেন কবি। বড়ো বড়ো চোখ দুটি লাল টকটকে। হাতের পেন্সিল দিয়ে তিনি লিখে চলেছেন-‘বলো বীর চির উন্নত মম শির/শির নেহারি আমারই নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির...’। এভাবেই বিদ্রোহী কবিতা লেখা হয়েছিল সেদিন। সারাটা রাত কবি নির্ঘুম কাটিয়েছিলেন। লেখার সময় কবি লেখার জন্য কলম ব্যবহার করেননি বার বার কালির দোয়াতে চুবাতে হয় বলে। এতে তার লেখার গতি থেমে যাবে। এ ক্ষেত্রে পেন্সিলের ওপরই ভরসা করেছিলেন তিনি।
তখনও রাত শেষ হয়নি। নজরুলের মনে হলো তিনি অসাধারণ কিছু লিখে ফেলেছেন, তবে তিনি বুঝতে পারেননি যে, এই কবিতাটিই তাকে এতটা খ্যাতি এনে দেবে, তিনি বিদ্রোহী কবি স্বীকৃতি পাবেন এই কবিতাটির জন্য।
কাজী নজরুল ইসলামের সাথে একই বাড়িতে থাকতেন কমরেড মুজাফফর আহমদ। তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠলে কবিতাটি পড়ে শোনানো হয় তাকে। এই কবিতা শুনে বিস্ময়ে ঝিম মেরে যান তিনি। মন্তব্য করারও ভাষা হারিয়ে ফেলেন। বেলা কিছুটা বাড়তেই ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার আফজালুল হক সাহেব এলেন। সৃষ্টিগর্বে উচ্ছ্বসিত তরুণ কবি তাকেও কবিতাটি পাঠ করে শোনালেন তার দরাজ কণ্ঠে। কবিতা শুনে মুজফফর আহমদের মতো ঝিম মেরে গেলেন না; তিনি বরং হইচই শুরু করে দিলেন। কবিকে দিয়ে কবিতাটা তক্ষুণি কপি করিয়ে সেটাকে বগলদাবা করে নিয়ে গেলেন ‘মোসলেম ভারতে’ ছাপানোর জন্য।
একই দিনে অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য এসে হাজির। তিনিও কবিতাটি শুনলেন। জানলেন এটা কপি করে নিয়ে গিয়েছেন আফজালুল হক সাহেব মোসলেম ভারতে ছাপানোর জন্য। তিনি অস্থির চিত্তে বললেন, ‘তুমি পাগল হয়েছ নজরুল! আফজালের পত্রিকা কবে বের হবে তার কোনো ঠিক আছে? তুমি কপি করে দাও, মোসলেম ভারতের আগেই ‘বিজলী’-তে ছাপাব কবিতাটি।’
১৯২২ সালের ৬ই জানুয়ারি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ছাপার হরফে বের হলো ‘বিজলী’ পত্রিকায়। বিজলী সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই কবিতার কারণে ওই সংখ্যার পত্রিকা এত বেশি বিক্রি হয়েছিল যে, পাঠকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দ্বিতীয়বার ছাপাতে হয়েছিল পত্রিকাটি।
‘বিদ্রোহী’ শুধু ‘বিজলী’-তেই আবদ্ধ থাকল না। আরো অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত হলো ‘বিদ্রোহী’। বিদ্রোহের দাবানলের মতোই বিদ্রোহী কবিতা ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতা ছেপে বের হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া জানা যায় অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখায়। এই অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য আলিপুর বোমা মামলায় বারীন ঘোষের সঙ্গে বন্দী ছিলেন। তিনি লিখছেন, ‘বিদ্রোহী’ ছাপা হওয়ার পরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের সাক্ষাত হয়। সে সময় কবিগুরুকে কবিতাটি পড়ে শোনানোর পর নজরুলকে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে বিশ শতকে রবীন্দ্র প্রভাব এতটাই সর্বগ্রাসী হয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল এর বাইরে যাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না বিদ্রোহী কবিতার নিশান উড়িয়ে হইহই করে নজরুল এসে হাজির হলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব, ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন, তুরস্কে কামাল পাশার আবির্ভাব, এসব পটভূমি নজরুলকে বিদ্রোহীর মতো কবিতা লেখার জন্য প্রভাবিত করেছে।’
মোহিত লাল মজুমদারের অযৌক্তিক দাবী
ঠিক এই সময়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার বিরুদ্ধে অদ্ভুত এক অভিযোগ নিয়ে এলেন মোহিতলাল মজুমদার। তিনি দাবি করলেন যে, নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা তার গদ্য রচনা ‘আমি’-র ভাব চুরি করে লেখা। তার এই দাবির স্বপক্ষে বেশ কয়েকজনকে জড়ো করে ফেললেন তিনি।
মোহিতলাল মজুমদারের সাথে নজরুলের সম্পর্ক ছিল মোটামুটি গুরু-শিষ্যের মতো। ১৯২০ সালের দিকে দুজনের পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। কিন্তু সেই সম্পর্ক বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল না। নজরুলের চেয়ে এগারো-বারো বছরের বড়ো হবার কারণে সম্পর্ক বন্ধুত্বের চেয়ে গুরু-শিষ্যে পর্যবসিত হয়। মোহিতলাল নিজেকে নজরুলের অভিভাবক ভেবে নিয়ে কর্তৃত্ব করা শুরু করেন। এই কর্তৃত্বের কারণেই একপর্যায়ে তাদের সম্পর্ক উষ্ণ থেকে শীতল হয়ে পড়ে। সম্পর্ক যখন উষ্ণ ছিল, মোহিতলাল মজুমদার সেই সময়ে নজরুলকে তার ‘আমি’ প্রবন্ধটি পড়ে শুনিয়েছিলেন। সেই প্রবন্ধের ভাব নকল করে বিদ্রোহী লেখা হয়েছে, কিন্তু কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়নি (!) এটাই ছিল তার মূল অভিযোগ।
মোহিতলাল মজুমদারের দাবী কতখানি সঠিক ছিল, সেটা বুঝতে গেলে তার ‘আমি’ প্রবন্ধটা পড়া উচিত। প্রবন্ধটি বেশ বড়ো বলে সবটা তুলে দেওয়া সম্ভব হলো না, তবে কয়েকটি অনুচ্ছেদ তুলে ধরা হলো :
‘আমি বিরাট। আমি ভূধরের ন্যায় উচ্চ, সাগরের ন্যায় গভীর, নভো-নীলিমার ন্যায় সর্বব্যাপী। চন্দ্রই আমার মৌলিশোভা, ছায়াপথ আমার ললাটটিকা, অরুণিমা আমার দিগন্তসীমান্তের সিন্দুরচ্ছটা, সূর্য আমার তৃতীয় নয়ন এবং সন্ধ্যারাগ আমার ললাটচন্দন।’
‘আমি ভীষণ অমানিশার সমুদ্র, শ্মশানের চিতাগ্নি, সৃষ্টি নেপথ্যের ছিন্নমস্তা, কালবৈশাখীর বজ্রাগ্নি, হত্যাকারীর স্বপ্নবিভীষিকা, ব্রাহ্মণের অভিশাপ, দম্ভান্ধ পিতৃরোষ।’
‘আমি রহস্যময়, আমি দুর্জ্ঞেয়। অন্ধকার চারিদিক আচ্ছন্ন করিয়াছে, উর্দ্ধে আকাশ ও নিম্নে জলস্থল আমার সত্তায় স্তম্ভিত হইয়া আছে। দিগন্তে মৃত্যুর চক্রনেমী সুষুপ্তির রাজ্য।’
‘আমি উন্মাদ। পর্ণকুটীরে হোমাগ্নি জ্বালিয়াছি, সাগর বালুকায় গৃহরচনা করিয়াছি, আমি নিদাঘ ঝটিকায় তুলসীমূলে সন্ধ্যাদীপ জ্বালিয়াছিÑআমি ভালোবাসিয়াছি। হায় উন্মাদ!’
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ এবং মোহিতলালের ‘আমি’-কে পাশাপাশি রেখে পড়লে বুঝা যায় যে দুটো সম্পূর্ণ দুই ধরনের রচনা। মোহিতলাল যেখানে ভোঁতা গদ্য লিখেছেন, সেখানে নজরুলের কবিতা তীক্ষè ফলার ধারালো এক ছুরি যেন। মোহিতলাল মজুমদারের ‘আমি’ গদ্য নিস্তরঙ্গ এক জলাশয়ের মতো স্থির এবং নিষ্কম্প। এর বিপরীতে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পাহাড়ি ঝরনার মতো খর¯্রােতা এবং গতিশীল। শব্দ ও ছন্দের এক প্রলয়নাচন সেখানে রয়েছে, যেটা মোহিতলাল মজুমদারের লেখায় নেই।
রবীন্দ্রনাথ গুপ্ত লিখেছেন, “মোহিতলাল মজুমদারের ‘আমি’ (জীবন জিজ্ঞাসার অন্তর্গত) প্রবন্ধের ভাববস্তুর সঙ্গে নজরুলের বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির সাদৃশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। কবিতার রচনার বেশ কয়েক বছর আগে মোহিতলালের প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। মোহিতলাল মনে করেন তার রচনাকেই নজরুল আত্মসাৎ করেছেন, অথচ কোথাও তার উল্লেখ মাত্র নেই। বলা বাহুল্য, ‘আমি’ প্রবন্ধের বীজ ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে গ্রন্থটি থেকে গৃহীত, আধ্যাত্মিক রূপকার্যের মূল্যেই সেটি উল্লেখ্য, সাহিত্যগুণে নয়। পরন্তু নজরুলের কবিতাটি যে একান্ত আত্মগত প্রেরণার ফল, তা কাব্যরসিক মাত্রেই স্বীকার করবেন। নতুবা রবীন্দ্র-প্রতিভা যখন মধ্যাহ্ন দীপ্তিতে বিরাজমান, তখনই নজরুলের আকস্মিক আবির্ভাব দলগোষ্ঠী নির্বিশেষে এমন সম্বর্ধিত হতো না।”
রবীন্দ্রনাথ গুপ্তের লেখা থেকে দেখা যাচ্ছে মোহিতলাল মজুমদারের ‘আমি’ প্রবন্ধটার ভাবও মৌলিক ভাব না। এটা নেওয়া হয়েছে ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রন্থ থেকে। সেটা আবার তিনি ‘আমি’ প্রবন্ধে স্বীকার করেন নাই। ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বইটার প্রভাবে মোহিতলাল মজুমদার ‘আমি’ লিখেছিলেন সেটার নাম ‘অভয়ের কথা’।
কমরেড মুজফফর আহমদের মতে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার যে সুর সেটা মোহিতলাল মজুমদারের ‘আমি’-র মধ্যে অনুপস্থিত। কাজেই, ‘বিদ্রোহী’-র জন্য মোহিতলাল মজুমদারের কাছে ঋণ স্বীকারের কোনো প্রশ্নই আসে না। এটা নজরুলের আপন প্রেরণায় রচিত কবিতা।
বিশ্বসাহিত্যে টিএস এলিয়ট, বোদলেয়ার যেমন সমকালীন-সমগোত্রীয়রা লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন তেমনি বাংলা সাহিত্যেও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশকেও নানাভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। শিল্পস্রষ্টা সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার পাশাপাশি তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ, হাসি-ঠাট্টারও কমতি ছিল না। সমকালীন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপের শিকার হয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। এ সবের নাটেরগুরু ছিলেন সজনীকান্ত দাস। ‘শনিবারের চিঠি’-কে এ কাজে ব্যবহার করতেন তিনি। সম্পাদক সজনীকান্ত দাস দলবদ্ধভাবে কটূক্তিতে কুশলতা দেখান। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তার প্রধান লক্ষ। ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করে এক ধরনের মজার খেলায় তাকে মেতে উঠতে দেখা যায়। যদিও তিনি আত্মস্মৃতিতে লিখেছেনÑ‘নজরুল শনিবারের চিঠির জন্মকাল হইতেই সাহিত্যের ব্যাপারে একমাত্র নজরুলকে লক্ষ করিয়াই প্রথম উদ্যোক্তারা তাক করিতেন। তখন আমি আসিয়া জুটি নাই।’ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মোহিতলাল মজুমদারকে নজরুল ‘গুরু’ বলে মানতেন; সেই মোহিতলালও নজরুলকে নিয়ে শনিবারের চিঠিতে ব্যঙ্গ কবিতা লিখেছেন!
‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্যারোডি
মোহিত লাল মজুমদার নিজের দাবী প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। কেউ সমর্থনও দেননি। বরং তার লেখাটি মানহীন বলে বিবেচিত হয়েছে। এতে নজরুলের প্রতি তার বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব অব্যাহত থাকে। এ সময় হঠাৎ করেই তিনি পাশে পেয়ে যান সজনীকান্ত দাসকে। সজনীকান্ত দাসের অভ্যাস ছিল কবি-সাহিত্যিকদেরই আক্রমণ করা। তাদের কবিতার প্যারোডি তৈরি করতেন তিনি। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্যারোডি করে তিনি ‘আমি ব্যাঙ’ নামে একটা কবিতা লিখলেন।
‘আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বর্ষা আসিলে ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাং।
আমি ব্যাঙ
আমি পথ হতে পথে দিয়ে চলি লাফ;
শ্রাবণ নিশায় পরশে আমার সাহসিকা
অভিসারিকা
ডেকে ওঠে ‘বাপ-বাপ।’
এই ব্যাঙ্গ কবিতাটি প্রকাশিত হবার আগেই মোহিতলাল মজুমদারের হাতে গিয়ে পড়ল। তিনি মহাউৎসাহে নানা জায়গায় এই কবিতা পড়ে মনের ঝাল মেটাতে লাগলেন। এর কিছুদিন পরে সজনীকান্ত দাস যোগ দেন ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায়। সেখানে এই কবিতা ছাপা হয়। কবিতা ছাপা হলো সজনীকান্ত দাসের নামে। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ালো অন্য জায়গায়। মোহিতলাল মজুমদার এই কবিতাটা এত বেশি জায়গায় পড়েছেন যে এটা ছাপা হবার আগে থেকেই অনেকের কাছে পরিচিত ছিল। নজরুলের বন্ধুরা মনে করতেন যে, এটা মোহিতলাল মজুমদারেরই লেখা। ফলে তারা নজরুলকে চাপ দিতে লাগল এর একটা উত্তর দেবার জন্য। একদিন কল্লোল অফিসে আটকে রেখে এর জবাব আদায় করে নিলো তারা নজরুলের কাছ থেকে। তাদের চাপে পড়ে নজরুল লিখলেন ‘সর্বনাশের ঘণ্টা’ নামের কবিতা। সর্বনাশের ঘণ্টা’ কবিতার শেষ কয়েক লাইন ছিল এমন :
“যত বিদ্রƒপই করো গুরু তুমি জানো এ সত্য-বাণী,
কারুর পা চেটে মরিব না, কোনো প্রভু পেটে লাথি হানি
ফাটাবে না পিলে, মরিব যেদিন মরিব বীরের মতো,
ধরা-মা’র বুকে আমার রক্ত রবে হয়ে শ্বাশত!
আমার মৃত্যু লিখিবে আমার জীবনের ইতিহাস
ততদিন গুরু সকলের সাথে করে নাও পরিহাস।”
নজরুল তার কবিতাতে মোহিতলাল মজুমদারকে দ্রোণাচার্য্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। ফলে, মোহিতলাল মজুমদার এর জবাবে পালটা কবিতা লেখেন ‘দ্রোণ-গুরু’ নামে। এটাকে অবশ্য কবিতা না বলে গালি আর অভিসম্পাত বলাই শ্রেয়। এখনকার যুগ হলে হয়তো প্রচলিত গালিই দিতেন তিনি। আগেকার যুগে বলে সংস্কৃত শব্দের আড়ালে গিয়ে গালি দিয়েছেন, এই যা। মোহিতলাল মজুমদারের ‘দ্রোণ-গুরু’ থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিচ্ছি এখানে।
“উন্মাদÑতুই উন্মাদ! তাই পতনের কালে আজ
বিষ-বিদ্বেষ উথলি’ উঠেছে, নাই তোর ভয় লাজ!
আমারে করেছ কুরু-সেনাপতি কৌরব নৃপমণি,
তাই হিংসায় পুরীষ-ভা-ে মাছি ওঠে ভন ভনি’!
তাই তাড়াতাড়ি পার্থের নামে কুৎসার ছল ধরে’
তারি নামে লিপি পাঠালি আমারে কুৎসিত গালি ভরে’
আমি ব্রাহ্মণ, দিব্যচক্ষে দুর্গতি হেরি তোরেÑ
অধঃপাতের দেরি নাই আর, ওরে হীন জাতি-চোর।”