ভালো থেকো নন্দিতা
নন্দিতা, তোর জন্য একটি আকাশ মুখ ভার করে বসে থাকে দিনরাত।
টুপটাপ ঝরে পড়ে গ্রহ-নক্ষত্র, আর অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো পৃথিবী।
তোর জন্য একসাগর নীল কষ্টে আকাশের বুক ভাঙে, শ্রাবণের অঝোর
বৃষ্টিতে ভেসে যায় বোধের তৃণভূমি, আকণ্ঠ ডুবে যাওয়া চরাচরের দুই হাত
প্রসারিত হয় স্ফটিক স্বপ্নে, শুধু তোর জন্য—শুধুমাত্র তোর দুই হাত ধরার
ব্যাকুল প্রতীক্ষায় দুবাহু কাঁপতে থাকে দ্বিধা থরো থরো!
আকুল আর্তনাদে পুরো পৃথিবী কেঁপে ওঠে যখন, পাহাড় যখন দ্বিধাবিভক্ত হয়,
তখন তুই কি সেই করুণ নিনাদ শুনতে পাস না এতটুক?
তোর কি বুক ভাঙে না, কেঁপে ওঠে না তোর পাথরের হৃদয়!
তাহলে কি তুই সত্যিই জন্মান্ধ-নিরেট পাথরে সৃষ্ট
প্রাণহীন স্ট্যাচু?
নন্দিতা, তোর জন্য—শুধু তোর জন্য ভোরের সূর্য ম্লান বধির, অন্ধ আজ।
কোথায় তার সেই জৌলুস স্ফটিক ঔজ্জ্বল্য, কোথায় তাপদগ্ধ প্রণয়ী
আলাপন দিঘির স্বচ্ছ জলের সাথে, মেঘভেদ করা তির্যক দৃষ্টি আজ তার
ফ্যাকাশে, ঘোলাটে, পা-ুর!
এখন মধ্য দুপুরেও অন্ধকারের তিলক আঁকে কুঞ্চিত করোটিতে!
এখন যাযাবর মেঘও তাচ্ছিল্যের গীবত গায় সময়ের চাকায়!
এখন কেমন আছিস তুই, কেমন করে কাটছে দিন তোর সকাল বা সন্ধ্যায়,
সেসব জানতে খুব ইচ্ছে করে। খুব ইচ্ছে করে তোর জানালায় পর্দা সরিয়ে
এক পলক দেখতে নীল ওড়নায় কেমন করে ভেসে বেড়াস তুই আজকাল।
নতুন কোন্ ঠিকানায় তোর গড়ে ওঠা বসতি কেমন পরিপাটি,
কতটা স্বচ্ছ সে সরোবরের জল,
পুরানো আকাশের সাথে তার কি কোন তুলনা চলে?
পুরনো দিন ধূলিধূসরিত তোর কাছে,
চকচকে নতুন রোদে ঝলসে গেছে তোর চোখ বুঝি!
সে চোখের পাতায় পুরনো জংধরা দিনের কোন আভাস
একটুও কি অবশিষ্ট নেই আজÑ
খুউব জানতে ইচ্ছে করে।
নন্দিতা, তোর নন্দিত নরকে সকালের সূর্য কেমন করে ছড়ায় আলো
কোজাগরী জোছনায় কেমন অবগাহন তোর?
যেখানেই থাকিস, যেমন করে থাকিস, যত দূরেÑ
বন্ধ জানালার এ-পার থেকে আকাশের নন্দিত আলো
অন্ধকার ভেদ করে তোর দেহে, চুলে, ললাটে, চিবুকে...
কৃষ্ণচূড়া ঠোঁটে পৌঁছে যাবে রোজ রোজ ভোরের বাতাসের আশীর্বাদ নিয়ে-
ভালো থাকিস তুই, ভালো থাকিস যে কোন আকাশে...