ফিরে এসো নীলাঞ্জনা [১০]
দশ
বিশেষ কিছু রিপোর্টিংয়ের কাজে অমিত ঢাকার বাইরে ছিল পনেরো দিনেরও বেশি। এ সময়ে ঝিনুকের সঙ্গে তার রোজই কথা হয়েছে। তবে গত তিনদিন ধরে ঝিনুকের ফোনে যোগাযোগ করতে পারেনি অমিত। আজ ঢাকায় ফিরে এসে অফিসে চলে এসেছে। অমিত মনে করেছে অফিস শেষ করে বানানীতে যাবে ঝিনুকের বাসায়।
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। অমিত অফিসে রাতের পালায় কাজ করছিল। হঠাৎ এক ভদ্রলোক অমিতের সঙ্গে দেখা করতে আসে। প্রথম পরিচয়ে তার নাম জমির উদ্দিন বলে জানালে অমিত বুঝতে পারে এই লোকটিই ঝিনুকের সৎচাচা। অমিত হাতের কাজ শেষ করে রিসিপশন রুমে গিয়ে বলে, ‘কেন এসেছেন বলুন।’
‘আপনি কি ঝিনুককে বিয়ে করেছেন?’
‘হঠাৎ এ প্রশ্ন?’
‘শুনলাম ঝিনুক তার সমস্ত সম্পত্তি আপনার সাথে উইল করে দিচ্ছে।’
‘কার কাছে শুনলেন?’
‘যে উকিল উইলের কাগজ ঠিক করে দিচ্ছে তার সহকর্মী জানিয়েছে।’
অমিত কিছুটা সময় ভাবলো। তারপর বলল, ‘উইল তো যে কাউকেই করা যায়। শুধু স্বামীকেই স্ত্রী তার সম্পত্তি উইল করে দিতে পারবে এমন তো নয়?’
‘আপনি তার স্বামী হন কিংবা না হন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’
‘কীসে আপনার যায় আসে?’
‘ঝিনুক যে সম্পত্তি আপনাকে উইল করে দিচ্ছে সে সম্পত্তির মালিক ঝিনুক নয়।’
অমিত বলল, ‘ঝিনুকের বাবার সম্পত্তি, বাবা তাকে উইল করে দিয়ে গেছেন।’
জয়নাল সাহেব হেসে বললেন, যিনি উইল করে দিয়ে গেছেন, অর্থাৎ ঝিনুক যাকে বাবা পরিচয় দিচ্ছে, সে তার বাবা নয়।’
‘কীসব পাগলের মতো কথা বলছেন?’ অমিত অবাক হয়ে বলে।
জয়নাল প্রতিবাদ করে বলে, আমি পাগল হতে যাব কেন? ঝিনুক যাকে বাবা বলে পরিচয় দিচ্ছে, সে আমার সৎভাই। ঝিনুক তার কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে।’
‘কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে কেউ কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তি উইল করে দেয়?’
‘ভাই যদি উইল করে না দিত তাহলে সম্পত্তি আমার মতো। আপনি যাকে ঝিনুকের বাবা বলছেন, তিনি আমার সৎভাই। তার অবর্তমানে আমিই হতাম সব সম্পত্তির মালিক। কারণ তার একটি মেয়ে ও স্ত্রী দুজনই মারা গেছে। আমার ভাই আমাকে পছন্দ করত না। পছন্দ না করার কারণ ছিল। আমি ছোটোবেলা থেকে আপনারা যাকে বখাটে বলেন, তাই। বর্তমানে আমি...’
‘কী?’
‘আমি আজ যা বলব, সবটাই সত্যি। আপনি রিপোর্ট করলে করতে পারেন। কিন্তু তাকে কিছু করতে পারবেন না আপনি। শুধু শুধু নিজের বিপদ ডেকে আনবেন।’
‘ভয় দেখাচ্ছেন?’
‘সত্যি বলছি। ভয় পেলে আমার কিছু করার নেই।’
‘যা বলছিলেন তাই বলুন।’
‘আমি স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালান করে হাজার কোটি টাকার মালিক। মন্ত্রী এমপি আমার হাতে মুঠোয়। আইনকে তোয়াক্কা করে চলি না আমি।’
অমিত বাধা দিয়ে বলে, ‘মন্ত্রী এমপিরাও আইনের বাইরে নন।’
‘এসব কথা থাক অমিত সাহেব। আমি সাবধান করে গেলাম। ওই সম্পত্তি আপনার হলে আপনাকে সরিয়ে দিতেও দ্বিধা করব না।’
জমির উদ্দিন খুব কৌশল করে তার কোমড়ে গুঁজে রাখা পিস্তলটা অমিত দেখিয়ে বলে, ‘এটায় ছটা গুলি থাকে। সবগুলোই আপনার জন্য রেখে দিলাম।’
অমিত চেয়ে চেয়ে দেখল লোকটি পিস্তলটি হাতে নিয়ে গেট দিয়ে বের হয়ে গেল।
হঠাৎ পুলিশ অফিসারের ফোন এলো।
‘তুমি কবে ঢাকায় ফিরেছ অমিত।’
‘আজই।’
‘এখন কি অফিসে।’
‘হ্যাঁ।’
‘অফিস থেকে বের হয়ে সরাসরি আমার বাসায় চলে এসো। তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে।’
অমিত ঝিনুকের কোনো খবর তার আছে কি না জানতে চাওয়ার আগেই লাইন কেটে যায়।’
সোফায় বসতে বসতে শফিক বললেন, ‘ঝিনুকের সঙ্গে তোমার শেষ কবে যোগাযোগ মানে কথা হয়েছে?’
‘তিনদিন আগে।’
‘ঝিনুক যে বিদেশে চলে গেছে, তুমি তা জানতে?’
‘কী বলছেন আপনি? ঝিনুক বিদেশে চলে গেছে, কবে, কোথায় গেছে?’
‘পরশু রাতের ফ্লাইটে। তবে কোথায় গেছে জানি না।’
‘অমিত, ঝিনুক যাওয়ার আগে তার সমস্ত সম্পত্তি তোমার নামে উইল করে গেছে। এই নাও তার ফটোকপি। উকিল রহমান সাহেবের কাছে মূল কপি আছে। এই উইলের সাক্ষী আমিও।’
অমিত নির্বাক হয়ে বসে থাকে। ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সে শফিক সাহেবের দিকে। শফিক সাহেব ড্রয়ার খুলে একটি বড়ো আকারের খাম বের করে অমিতের হাত দিয়ে বলল, ‘এর মধ্যে উইলের ফটোকপি আছে। আর এটা তোমাকে লেখা চিঠি। চিঠির মুখ বন্ধ করা আছে। আমি জানি না কী লেখা আছে চিঠিতে।’
অমিত উইলের কাগজ স্পর্শ করল না। ফিরিয়ে দিয়ে বলল, ‘শফিক ভাই, এটা আপনার কাছে রেখে দিন। আমার সম্পত্তির দরকার নেই। ওর চিঠিটা দরকার আমার। আমি এটা নিয়ে গেলাম।’
অমিত উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়। শফিক সাহেব বারবার ডেকেও তাকে ফেরাতে পারে না।