ফিরে এসো নীলাঞ্জনা [৯]
দিনে দিনে ঝিনুকের মদ খাওয়া বেড়ে যায়। প্রায়ই সে বারে গিয়ে মদ খায়। মাতাল হয়ে ঘরে ফেরে। ঘরে এসে এটাসেটা ভাঙচুর করে।
রিপোর্টিংয়ের কাজে বেশ কয়েকদিন ঢাকার বাইরে থাকতে হয়েছে অমিতকে। এ সময় প্রায় প্রতিদিন দু-একবার করে ঝিনুকের সঙ্গে তার ফোনে কথা হতো। কিন্তু গত দুদিন ধরে ঝিনুকের ফোনে কল করে পাওয়া যায়নি ঝিনুককে।
ঢাকায় ফিরে অমিত ঝিনুকের বাসায় ছুটে গেলে জানতে পারে গতকাল রাতে মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়েছিল ঝিনুক। বারের লোকজন তাকে ধরাধরি করে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু বাসায় এসে পরদিন সকালে খোঁজ পড়ে যে, ঝিনুকের আই ফোনটি নেই।
এসব শুনে ঝিনুকের ওপর খুব রাগ হয় অমিতের।
অমিত এসেছে জেনে দোতলা থেকে ধীরে পায়ে নিজে নেমে আসে ঝিনুক। তাকে দেখে চেনা যায় না। চোখ দুটি কোটরে ঢুকে গেছে। মাথার চুল এলোমেলো। পরনে নাইটি। ঝিনুককে দেখে অমিতের খুব কান্না পায়। ঝিনুক তখনও স্বাভাবিক নয়। মদের নেশা কেটে গেলেও স্বাভাবিক হতে পারেনি সে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে-নামতে ঝিনুক চেঁচিয়ে বলে, ‘তুমি এলে কেন? কে তোমাকে আসতে বলেছে! যাও, চলে যাও অমিত! আমি মরে যাই, আমার কোনো খোঁজ করতে হবে না তোমাকে। তোমাকে দেখতে চাই না আমি।’
অমিত জানে এটা ঝিনুকের অভিমানের কথা। ঝিনুকের কথায় কোনো উত্তর দেয় না সে। ঝিনুক এসে অমিতকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। অমিত জানে, এ সময় ঝিনুককে শান্ত রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অমিত বলে, ‘কী হয়েছে তোমার?’
‘কী হয়েছে তুমি জানো না?’
‘কী করে জানব? তোমাকে তো ফোন করেও পাইনি গত দুদিন।’
‘আমার মোবাইল সেট নেই অমিত। নতুন সেট কিনেছি, ওটায় সব নম্বর নেই। তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে আমার খুব খারাপ লেগেছ। খুব একা লাগতো আমার। তাই প্রতিদিন মদ খেতাম।’
‘তুমি মদ খাবে কেন?’
‘অভ্যাস হয়ে গেছে। তাছাড়া তোমাকে দুদিন তোমার কোনো খোঁজ পাইনি!’
‘আমি না থাকলে তোমার খারাপ লাগে। আর তখনই তোমাকে মদ খেতে হবে? তোমাকে না দেখলে আমার খারাপ লাগে না? আমি কি মদ খাই।’ অমিত ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে ভাবে সত্যিই কি ঝিনুকের জন্য তার খারাপ লাগে? সত্যিই কি সেও ঝিনুককে ছাড়া একাকী হয়ে যায়? উত্তর খুঁজে পায় না অমিত।
হঠাৎ ঝিনুক পাগলের মতো হেসে ওঠে। হাসতে-হাসতে বলে, ‘সত্যিই আমাকে ছাড়া তোমার খারাপ লাগে? তুমি কি সত্যি বলছ অমিত? আমি কি সত্যি শুনছি?’
অমিত মাথা নিচু করে থাকে। তারপর আস্তে-আস্তে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমিও তোমাকে মিস করি, খুব মিস করি।’
হঠাৎ ঝিনুক বলে, ‘অমিত, আমি যদি মরে যাই এত সম্পত্তির মালিক কে হবে জানো?’
‘তোমার উত্তরাধিকারী যে, তিনিই তো পাবেন।’
‘উত্তরাধিকারী বলতে তো কেউ নেই আমার। আমি ¯্রােতে ভেসে আসা ফুল। এটা বাবার সম্পত্তি। আমাকে উইল করে দিয়ে গেছেন। এর উত্তরাধিকারী আমার ছেলেমেয়ে হবে। ছেলেমেয়ে না থাকলে ভাইবোন। সেসব আমার কিছুই নেই। আমি এই সম্পত্তিটা একজনকে উইল করে দিতে চাই।’
‘কে সে?’
‘জানি না কে সে। উইল করে না দিলে আমার অবর্তমানে এই সম্পত্তির মালিক হবে আমার বাবার সৎভাই। এ জন্য সে আমাকে খুন করতে চাইছে।’
‘বলো কী?’
‘তোমাকে বলার তো সময়ই পেলাম না! আমার কাকা জমির উদ্দিন খুব খারাপ মানুষ। বিদেশে লোক পাচার করা, মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান করে সে। তার একটি গ্যাং আছে। ওরা আমাকে প্রায় প্রতিদিন সম্পত্তির ভাগ নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। না হলে আমাকে খুন করারও হুমকি দিচ্ছে।’
‘বলো কী?’
‘কী আর বলি! এই সম্পত্তিই এখন আমার শত্রু। কোথাও নিশ্চিন্তে যেতেও পারি না। ভাবছি বিদেশ চলে যাবো খালার কাছে।’
‘তাহলে তোমার ফ্যাক্টরি, বাড়িÑএসবের কী হবে?’
‘সে জন্যই তো উইল করে দিয়ে যেতে চাই। আমি তো আর নাও ফিরে আসতে পারি!’
কী বলছ তুমি?
কী আর বলতে পারি বলো?
চলবে