এসো বৃষ্টির জলে ভিজি


সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে খুব, ঘড়িতে এখন বেলা তিনটা;

বৃষ্টিটাও জেঁকে বসেছে বেশ।

অফিস ছুটি হয়েছে একটু আগে—এক্ষুনি বেরুবো আমি।

কী বললে, বৃষ্টিতে ভিজে যেন বের না হই?

পাগলী ! বৃষ্টির ভয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার লোক আমি!


ছেলেবেলায় বৃষ্টি হলেই মায়ের আঁচল ছেড়ে

বেরিয়ে পড়তাম উঠানে, বড় পুকুরের ঘাটে গিয়ে

জলের গভীরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম দলবেঁধে। 

মা বেশ ভালো করেই জানতেন, তার পাগল ছেলেকে

আটকানো যাবে না এমন অঝোর বাদলে।

মা শুধু বলতেন, ‘বেশিক্ষণ ভিজবি না কিন্তু—

ঠা-া লেগে যাবে! জ্বর হবেÑ কষ্ট পাবি!’


আমার কষ্টগুলোকে নিয়ে মা খুব ভাবতেন।

তবুও বৃষ্টির দিনে তিনি কোন বারণ করতেন না আমাকে।


নন্দিতা, তুমি আমার কষ্ট নিয়ে ভাবো না কখনও?

বোঝো না বৃষ্টিতে ভিজেতেই আমার যতো সুখ,

ভিজতে না পারাটাই অসুখ।


ছেলেবেলায়

পাঠশালায় যেতে-যেতে কখনও বৃষ্টি হলেই ইচ্ছে করে ভিজতাম আমি

বইখাতাগুলোকে ভিজাতাম।

যারা ছাতা মাথায় বৃষ্টি ঠেকায়, যারা বৃষ্টির দিনে দরজা বন্ধ করে ঘুমায়,

‘বৃষ্টিটা হতচ্ছাড়া’ বলে মন খারাপ করে যারা, আমি তাদেরকে দেখে ভাবি—

ভাবি আর মনে মনে বলি, আমি কেন এমন হলাম না! 

কেন আমি তাদের মতো নই!

বৃষ্টিতে ভিজে-ভিজে কেন আমি অসুখ বাঁধাই, বই-খাতা ভিজাই,

আর গুরুজনদের বকুনি খাই!


আমাদের গ্রামের বাড়ির পোস্ট অফিসে রোজ আসত যে ডাকহরকরা—

বৃষ্টি ওকে ঠেকাতে পারেনি কখনও কোনোদিন,

আমাদের জমি চাষ করত যে কয়েকজন বর্গাচাষি,

ওদেরকে দেখেছি বৃষ্টিতে ভিজে-ভিজে জমিতে লাঙল দিতে,

বীজ বুনতে। বৃষ্টিতে ভিজে ধান কাটায়ও ওদের আনন্দ করতে দেখেছি।

বরং বৃষ্টি না হলে ওদের মুখ শুকিয়ে যেতো; আকাশের দিকে তাকিয়ে

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতো ঈশ্বরের কাছে।


মনে পড়ে,

বৃষ্টির দিনে ছেলেবেলায় শাপলা বিলে চলে যেতাম নৌকায় চড়ে।

সেখানে আকণ্ঠ জল থেকে শাপলা তুলে নৌকায় ভরতাম।

বাগান থেকে ঢেঁকিশাক, হেলেঞ্চা আর কলমি শাক তুলে এনে

মাকে খুশি করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাতাম!

মা খুশি হতেন কি না জানি না; শাসনের মধ্যেও হেসে বলতেনÑ

‘আজ আর তোকে মারব না আমি!

মেরে কী লাভ, তোকে তো কাঁদাতে পারলাম না কোনোদিন!’

কী জানি কেন মায়ের পিটুতেও কষ্ট পেতাম নাÑ

কাঁদতাম না কখনও আমি!


আজ এই বৃষ্টির দিনে মাকে খুব মনে পড়ে, বাবাকে খুব মিস করি।

দলবেঁধে যাদের সাথে হাডুডু খেলেছি—

যে ময়না-বুর মুখে গল্প শুনেছিÑতাদের খুব মনে পড়ে আমার।

নন্দিতা, আর আজ এই সময়ে তোর কথা ভেবে-ভেবে ব্যাকুল আমি—

ঝড়ো বাতাসের মতো এলোমেলো;

আজ আর কোনো কিছু আজ ঠেকাতে পারবে না আমায়

আজ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তোমার কাছে যাব!


মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮ এপ্রিল, ২০১৯
কাব্যগ্রন্থ : ভালো থেকো নন্দিতা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url