একটি বসন্ত গোধূলি
একটু আগে একপশলা বৃষ্টি হয়ে এখন পড়ন্ত বিকেলের পর
গোধূলির সব আয়োজন শেষ। একটু পরেই নামবে সন্ধ্যা।
পশ্চিম দিগন্তে সিঁদুর রঙের মেঘ ছিঁটেফোঁটা
চলে যাচ্ছে দূর থেকে দূর দেশে।
তোমার তো আবার সিঁদুর রঙটা খুব পছন্দ
বলেছিলে আমার সিঁথিতে একদিন সিঁদুর পরাবে তুমি
আমি খুব হেসে বলেছিলাম, দূর তাই হয় নাকি?
সিঁদুর তো আমাদের কালচার নয়,
তুমি বলেছিলে মনের ওপর কি কালচার চাপিয়ে দেয়া যায়?
মন যা চায় তাই তো কালচার।
আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজও আমাকে তোমার ছোঁয়া হলো না
আজও সিঁথিতে সিঁদুর পরা হলো না তোমার হাতে!
সে যাক, তুমি এখন কী করছ?
আমার কিন্তু এমনি একটি সন্ধ্যায় তোমাকে কাছে পেতে খুব ইচ্ছে করে।
এমনই কোনো গোধূলি বেলায় তুমি ব্যালকনিতে রকিং চেয়ারে বসে আছ
পরনে তোমার সাদা রঙের ফতুয়া, আর স্ট্রাইপ রিলাক্স পাজামা
আর আমি দাঁড়িয়ে আছি রেলিং ধরে, তোমার খুব কাছে।
একটি গান গুন-গুন করছি আমি
শুনে তুমি বললে, একটু জোরে গাও তো শুনি।
আমি তখন আকাশের দিকে মুখ করে দুই চোখ বুজে
তোমাকে ভাবতে ভাবতে গাইলামÑ
‘একটুখানি তাকাও যদি মেঘগুলো হয় সোনা
আকাশ পানে চেয়ে আছি
মন কেন বুঝছ না!’
অথবা ‘ওহে শ্যাম তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিব
অন্য কাহারো না আমি হইতে দেবো।’
অথবা মনে করো—
আমি পিছন থেকে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরব
হাতে তোমার চায়ের কাপ। কিছুটা চা ছলকে পড়ে তোমার
স্ট্রাইপ পাজামার বারোটা বাজিয়ে দিলো।
তুমি বললে, আহা কী করো নন্দিতা! সত্যিই তোমার পাগলামো গেল না!
তোমার কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে তোমার দুহাত ধরে
টেনে তুললাম আমার সামনে
তারপর দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম তোমাকে
আমার কত জনমের ইচ্ছে পূর্ণ হল!
তোমার শরীরে তখন ওডিকোলনের তীব্র ঘ্রাণ
জানো তো এই ঘ্রাণটায় আমি মাতাল হয়ে যাই।
আমি তখন ঠোঁট ছোঁয়ালাম তোমার ঠোঁটে!
তোমারও তখন পৌরুষ উঠল জেগে
আমাকে টেনে নিলে বুকের মধ্যে—
আমি তখন কাঁপছি থর থর করে, দুই ঠোঁট শুকিয়ে আমার কাঠ
আমি দাঁড়াতে পারছিলাম না কিছুতেই!
তারপর সবটুকু ভর তোমার উপর ছেড়ে দিয়ে চোখ বুজলাম আমি
আর তুমি প্রচ- ঝড়ের মধ্যে ছুড়ে ফেলে দিলে আমাকে
আমি ভিজে গেলাম, ভিজে গেলাম কোনো এক বসন্ত গোধূলিতে!
বলো না, এমন দিন কি আমি পাবো কোনোদিন!
দেবে তুমি আমাকে এমনি একটি বসন্ত গোধূলি?
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
কাব্যগ্রন্থ : ভালো থেকো নন্দিতা