আহত সারস
সন্ধ্যার ঠিক আগে যখন গোধূলির মরা আলোয়শ্রাবণের মেঘ ভেসে আসে, যখন
বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট খলবলিয়ে ওঠে, তখন
খেয়াঘাটে শেষ কথাটি মনে পড়ে---'চিঠি দিয়ো,
সুযোগ পেলেই ফোন করো কিন্তু...!'
ঘাড় নেড়ে বলেছিলাম, আচ্ছা---আচ্ছা।
তুমি বলেছিলে, 'মনে থাকবে তো তোমার?'
কিছুই বলিনি আমি, আর্দ্র দুই চোখে
তোমাকে ভিজিয়ে দিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম সেদিন,
একবারও ফিরে তাকাতে পারিনি আর!
তারপর কত গোধূলি, কত শ্রাবণ হয়েছে অতীত,
কত বসন্ত ফিরে গেছে রাগে-অনুরাগে,
কত কোকিল পঞ্চমীতে হয়েছে বেহুঁশ, তখন
একটিও গোলাপ ফোটেনি আর, দুঃখ তার
লিখে গেছে নাম পথ হারাবার দলে!
আজ দিনের শেষে জোছনা-ধোয়া স্ফটিক শিশির
কত কথা মনে করিয়ে দেয়!
দিন শেষে রাতে বিবাগী বাগেশ্রীতে বাজে বাঁশি,
আমি তন্ময় হয়ে শুনি, দুই চোখে খেয়াঘাটের
ছায়াচিত্র ভেসে ওঠে...
পালাতে পারি না কিছুতেই।
যেতে-যেতে থমকে দাঁড়াই, ভোরের ভৈরবীতে
ওপার থেকে ভেসে আসে স ঋ জ্ঞ ম প (সা-রে-গা-মা-পা)
হারমোনিয়ামের রিডে তোমার আঙুল ব্যস্ত আলাপে,
আর আমি অস্থিরতায় ঘেমে উঠি,
দুই কান উৎকীর্ণ করে শুনি হাহাকার সাহারার;
সম্মুখে ডানা ঝাপটায় এক আহত সারস!
নোট : স ঋ জ্ঞ ম প- (কবিতায় এভাবে লেখা হয়েছে)। এর উচ্চারণ হবে : সা রে গা মা পা। রাগ ভৈরবীর আরোহনের ৪টি স্বর কোমল : ঋ জ্ঞ দ ণ > রে গা ধা নি। রে (ঋ) এবং গা (জ্ঞ) কোমল বুঝাতে ওভাবে লেখা হয়েছে।
বাগেশ্রী একটি রাগের নাম। এর সময় রাত নটা। করুণ রসের রাগ এটি। বাগেশ্রী আমার সবচেয়ে প্রিয় রাগ।
৯ই জুলাই/২০২৩