ফিরে এসো নীলাঞ্জনা [৬]

 


ছয়

দেখতে-দেখতে ছয় মাস কেটে গেল। এর মধ্যে অমিত অফিসে সবার খুব কাছের মানুষ হয়ে গেছে। বিশেষ করে সম্পাদক সাহেব যে কোনো এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করাতে অমিততে বেশি প্রাধান্য দেন। কিন্তু সিটি এডিটর সাহেবের মন জুগিয়ে চলতে পারছিল না অমিত। সব সময়ই এটা হয়নি, ওটা হয়নি বলে অমিতকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। কেন যে সিটি এডিটরের সঙ্গে এরকমটা হচ্ছে অমিত বুঝতে পারে না। এ নিয়ে একদিন অনিমেষের কাছে বিষয়টি উঠালে বলল, তার কথায় খুব পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো চলো। কেউ ভালো কিছু করলে সে সেটা সহজে গ্রহণ করে না। এমনটাই হয়ে আসছে। তারপর অনিমেষ বলল, তার পারিবারিক জীবনটা খুব একটা সুখের নয়। তার স্ত্রী অন্য একজনের সঙ্গে চলে গেছে। দুদুটো মেয়ে বিদেশ। একটা ছেলে বখাটেদের দলে নাম লিখিয়েছে। ভদ্রলোক একা থাকে। তার কথায় কিছু মনে করো না।

অমিত বলল, ‘মানিয়ে নিতে চেষ্টা করব দাদা। তবে আমার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ হলে আপনি আমাকে জানাবেন প্লিজ। খুনের আসামীরও তো কৈফিয়ত থাকে!’

‘তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে না। আমি সবটুকু জানি তোমার।’

হঠাৎ একদিন সম্পাদক সাহেবের রুমে ডাক পড়ল অমিতের। অমিত সম্পাদক সাহেবের রুমে ঢুকে সালাম দিলে ইশারায় অমিতকে বসতে বললেন। একটা ফোনালাপে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বেশ কয়েক মিনিট কেটে গেল ফোন শেষ করতে। তারপর রিসিভার নামাতে-নামাতে বললেন, ‘অমিত তুমি তো সর্বনাশ করে ফেললে!’

অমিতের সারা শরীর কেঁপে উঠল। ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল সম্পাদক সাহেবের দিকে। সম্পাদক সাহেব আজকে পত্রিকার প্রথম পাতায় অমিতের লেখা রিপোর্টটার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তোমার রিপোর্টের পর তো চালের বাজারে আগুন লেগে যাবে!’

অমিত বলল, ‘সরি, ঠিক বুঝতে পারছি না কোথায় কী ভুল করলাম আমি!’

সম্পাদক সাহেবের অমিতের রিপোর্ট থেকে দুই লাইন পড়ে শুনালেন। রিপোর্টে অমিত লিখেছে, ‘এবারের বন্যায় ধানখেত তলিয়ে গেছে। আগাম বন্যার কারণে অনেকেই মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। এ বছর চালের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

‘আমি কী ভুল করলাম ঠিক বুঝতে পারছি না।’ অমিত আবারও বলল।

‘তুমি বুঝতে পারোনি বলেই তোমাকে ডেকেছি। এই যে তুমি লিখলে চালের দাম বাড়তে পারে। এই রিপোর্ট পড়ার পর অসৎ ব্যবসায়ীরা চাল মজুত করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাবে। তুমি আজই খবর নিলে বুঝতে পারবে চালের দাম অলরেডি বেড়ে গেছে।’

‘কিন্তু এটা তো সত্য। ফসল ওঠেনি। খাদ্যসংকট দেখা দেবে। সরবরাহ কম হলে দাম তো বাড়তেই পারে।’

‘তোমার ব্যাখায় কোনো ভুল নেই অমিত। তবে দাম বাড়তে পারে বলে যে কথা বলেছ, সেটা অসৎ ব্যবসায়ীরা কাজে লাগাবে। খাদ্যসংকট হলে সেটা সরকার দেখবে। সরকার কিন্তু চারদিকে কড়া নজর রাখছে। আমি যেটা জানি, সরকার ইতিমধ্যেই বিদেশ থেকে চাল আমদানীর ব্যবস্থা করে রেখেছে। খবরটুকু তুলে ধরা তোমার কাজ। ভবিষ্যতে কী হতে পারে, সেটা নিউজে না আসাই মঙ্গল।’

‘সরি। আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।’

‘এরপর থেকে সতর্ক হবে। আর একটা ব্যাপার। সিটি এডিটর সাহেব তোমার উপর খুশি নন। সেটা বড়ো কথা নয়। তিনি অনেকের উপরই খুশি থাকেন না। এ জন্য তোমাকে কিন্তু আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ওনার কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে ভালো করে দেখে নেবে। কোথাও সমস্যা হলে অনিমেষেকের সঙ্গে পরামর্শ করবে।’

সম্পাদক সাহেব বললেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যুটি খুব স্পর্শকাতর। সেটা তুমি জানো। আমি চাইছি রোহিঙ্গাদের উপর একটি রিপোর্ট তুমি করো। আমি স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তোমার একটা এপনমেন্ট করিয়ে দেবো। তোমার এক্রিডিটেশন কার্ড এর মধ্যে পেয়ে যাবে। তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। সচিবের সঙ্গে কথা বলেই তুমি রিপোর্টটা তৈরি করবে। আমি দেখে দেবো।’

এরপর পড়ুন পর্ব ৭

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url