কষ্টের বাগান
জোছনায় জোনাকের সঙ্গে গল্প বলা হয় না কতোকাল!
কতোকাল মধ্যরাতে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ গালিচায় শুয়ে
আকাশ দেখা হয় না; খর¯্রােতা নদীতে জব্বার মাঝির
ছইঘেরা নৌকার গলুইয়ে বসে বৈঠা আর জলের শব্দে
জলতরঙ্গ-শিবরঞ্জনিও শোনা হয় না, নদী তীরে গাঁয়ের
দূরন্ত কিশোরীর দুর্বার ছুটে চলায়ও তোমাকে দেখি না!
আমি এখন অদ্ভুত জগতে জীবনকে খুঁজে ফিরি প্রতিদিন।
প্রতিদিন সকালে-দুপুরে, পড়ন্ত বিকেলে এবং অন্ধকারে
ভুল গন্তব্যে ছুটে চলি। এখানে নদী নেই, প্রান্তর নেই—
মাঝির কণ্ঠে ভাটিয়ালি নেই; অগণিত মুখোশের ভিড়ে
একটিও মানুষ নেই; লতিফ ভাইয়ের মতো একতারায়
নিমগ্ন পুরুষ—দুঃখজয়ী অভাবী বিবাগী স্বজন নেই!
এখানে আকাশ আছে, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর নেই,
নেই পাহাড়, নদী, বন-বনান্ত—বর্ষায় বিস্ফোরিত নদীর
একরোখা ছুটে চলা; আছে মধ্যরাতে মাতালের উচ্ছ্বাস,
গণিকাদের নূপুরের নিক্কণ, ঝর্ণার মতো খিল-খিল হাসি,
আছে দেহের সঙ্গে দেহের, জীবনের সঙ্গে জীবনের খেলা,
আমিও আছি এসবের মধ্যে, অথচ তুমি নেই কোথাও!
প্রতিদিন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় অলীক জায়নামাজে ধ্যানী
বকের মতো এক পা তুলে জীবনকে আস্তে-আস্তে নিয়ে
যাই মৃত্যুর অন্ধকারে; গহন গভীর বোধের ভেতর থেকে
কে যেনো বিদ্রুপ করে—স্বজনের মিছিলে আর তুমি নেই!
সন্তর্পণে ফিরে আসি নিজের ভেতরে, কুণ্ঠিত অবগুণ্ঠিত
একজন পরবাসীকে নিয়ে আমার খুব কষ্টে কাটে দিন।
ঢাকা
কাব্যগ্রন্থ : এই বসন্তে তুমি ভালো থেকো