কিছু স্মৃতি কিছু কথা : জীবনে প্রথম আটার রুটি খাওয়া!
নাসির আহমেদ কাবুল।। জীবনে প্রথম আটার রুটি! সে এক মজার কাহিনী। ১৯৬৮ বা ১৯৬৯ সালের ঘটনা। তখন আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। এই বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের একটি অংশ ছিল--পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা এনেছি; ৩০ লাখ মানুষ সে যুদ্ধে জীবন দিয়েছে, ৩ লাখ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছে; সে প্রসঙ্গ অন্য কোনো লেখায় উঠে আসবে।
আইয়ুব খান সরকার গ্রামে গ্রামে রিলিফে চাল ও আটা দিতো। চাল ঠিক দিতো কিনা মনে নেই, তবে আটার বিষয়টি মনে আছে, জীবনে প্রথম আটার রুটি খাওয়ার মধ্য দিয়ে। তখন আটার রুটি গরীব-অভাবী মানুষ খেতো। আটা দিয়ে কীভাবে রুটি বানাতে হয়, তা তারা জানতো না। আটাকে লবণ ও জলে ভিজিয়ে কাই করে রুটি বানানো হতো। এখনও কেউ কেউ সে ধরনের রুটি খায়। কেউ কেউ বলেন, ওমন করে রুটি বানালে নাকি স্বাদ বেশি হয়। আমিও সেরকম পছন্দ করতাম।
সে যা হোক। আটা তখন বাজারে বিক্রি হতো না। গরীব মানুষেরা রিলিফে আটা পেতো। তারা সেগুলো কিছু কিছু বিক্রি করে চাল কিনতো। আমরা তখন গ্রামে থাকি। একদিন সন্ধ্যায় মা আট আনা পয়সা দিয়ে কাজের ছেলেটিকে অন্ধকারে একজন গরীব মানুষের কাছে পাঠালেন এক সের আটা কিনে আনার জন্য। মা কাজের ছেলেকে বলে দিলেন কেউ যেন জানতে না পারে, যে আমি তোকে আটা আনতে পাঠিয়েছি।
আটা এলো। মা রাতের অন্ধকারে রান্নাঘরে গেলেন। তারপর এক সময় দেখলাম আমাদের আট ভাইবোনকে একটি করে আটার রুটি ও এক কাপ চা দিয়ে মা বললেন, ভিজিয়ে ভিজিয়ে খা। তবে সাবধান তোর বাপকে যেন বলে দিস না। সেই প্রথম আটার রুটি খাওয়া হলো আমাদের। বাবা কেন, বাড়ির কেউ আর জানতে পারেনি আমার মা গোপনে গোপনে কী কাজটি করেছিলেন।
সে সময়ে গ্রামে খুব কম লোকের বাড়িতে চা হতো। যারা অবস্থাসম্পন্ন পরিবার তারা ছাড়া চা খাওয়ার স্বপ্নও দেখতো না। আমাদের বাড়িতে আমাদের ঘর ছাড়াও আরো দুই চাচার ঘরে চা তৈরি হতো।